গোটা বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারের পুনরুদ্ধার এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের অবস্থা গত বছর বেশ স্থবির ছিল। এই স্থবিরতার কারণে বিশ্বব্যাপী বেকারত্বের হার ৫ শতাংশেই স্থির থেকেছে। যদিও তরুণ বেকারত্বে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে, তা এখনও ১২.৬ শতাংশে অবস্থান করছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথ গতি শ্রমবাজারের পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমবাজারে বৈশ্বিক চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বিরাট ফারাক রয়ে গেছে। জেনেভায় আইএলওর সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক কর্মসংস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ২০২৫’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চিত্র।
আইএলওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের তরুণ-তরুণীরা, বিশেষ করে নারীরা, শ্রমবাজারে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কর্মক্ষম হলেও অনেক নারী উৎপাদনশীলতায় পিছিয়ে, যা জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক সমতা অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার বর্তমানে মাত্র ৪৯.৫ শতাংশ। তবে এর মধ্যে পুরুষদের অংশগ্রহণ ৭৮ শতাংশ হলেও নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ২১.২৫ শতাংশ। দেশের প্রায় ৩০.৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী কোনো কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত নয় (NEET)। এই হার নারীদের মধ্যে আরও উদ্বেগজনক—৪৯.৩ শতাংশ।
বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারের ওপর বিভিন্ন বিষয় প্রভাব ফেলছে। ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ঋণের সংকট শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বর্তমানে বিশ্বে ৪০ কোটি ২০ লাখ মানুষ কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও কাজ পাচ্ছে না। এদের মধ্যে ১৮ কোটি ৬০ লাখ বেকার, ১৩ কোটি ৭০ লাখ পছন্দসই কাজ না পাওয়ার কারণে কাজ করছে না এবং ৭ কোটি ৯০ লাখ ব্যক্তি পারিবারিক দায়িত্বের কারণে কাজ করতে পারছে না।
উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার বাড়লেও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এটি কমছে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে বৈষম্য এখনও প্রকট। কর্মক্ষেত্রে নারীদের কম অংশগ্রহণ অনেক দেশেই জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেন বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে শ্রমবাজারে সক্রিয় নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রমবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক শ্রমবাজারের উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই নীতি গ্রহণের বিকল্প নেই। নারীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং কাজের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তা না হলে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই সংকটময় সময়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং সুশাসনই হতে পারে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের প্রধান হাতিয়ার।